কৃষি, মাটি ও আবহাওয়া
সম্পর্কে বিশেষ তথ্য
|
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার মোট আয়তনের ১৪% জমিতে মাঠ ফসল এবং ১৩% জমিতে ফল উৎপাদিত হচ্ছে। ফলের জমি বৃদ্ধি পেলেও ফসলের জমি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। উপজেলার ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষকের মাঝে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বিগত তিন বছরে প্রতি বছর গড়ে ১০৫০০ মে.টন চাল উৎপাদন করে যা চাহিদার তুলনায় ১৫০০ মে.টন ঘাটতি এর অন্যতম কারণ হলো উপজেলার আয়তনের তুলনায় দানা জাতীয় শস্য আবাদের সমতল জমির পরিমান কম । গত তিন বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৫০০০ মে.টন সবজি উৎপাদিত হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় ৯০০০ মে.টন বেশী বিশেষ করে এখানকার উৎপাদিত মুখীকচু দেশের সবত্র বাজারজাতক করণ করা হয়। ফল উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এখানকার উৎপাদিত আম (বিশেষ করে আ¤্রপালি) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য জেলার বাজারে খাগড়াছড়ি ব্রান্ড নামে বিক্রি হয়েছে। এ উপজেলায় বিগত তিন বছরে প্রতি বছর গড়ে ৪০০০০ মে.টন বিভিন্ন রকমের ফল উৎপাদিত হয়েছে। কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি বিস্তারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিগত তিন বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৫০ জন কৃষক/কৃষানীকে প্রশিক্ষণ ও প্রতি বছর গড়ে ৭৫ টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেছে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গত বছর ৯০ মে.টন জৈব সার ও ১০০০ মে.টন রাসায়নিক সার কৃষকদেরকে উদ্ভুদ্ধকরনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে। ধানের জমিতে পোকামাকড় দমনে শতভাগ পার্চিং করা হয়েছে। বিষমুক্ত সবজি ও ফল উৎপাদনের জন্য ৫ টি আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুল এবং ২০০০ টি সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া মাঠ দিবস, উঠান বৈঠক, উদ্ভুদ্ধকরন ও ফলদ বৃক্ষ মেলা ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০০০০ টি ফলদ বৃক্ষরোপন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধকরন, সেচ সাশ্রয় এবং খরা সহিঞ্চু ফসলের জাত ব্যবহারে কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার ১টি ডিজিটাল কৃষি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে- যার মাধ্যমে কৃষক/কৃষানীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কৃষি সমস্যার সমাধান করতে পারে। ইহা ছাড়া গত বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫০০ বিঘা/ পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরন করা হয়েছে। উফশী আউশ ৮০ বিঘা/ পরিবার, নেরিকা আউশ ১৫০ বিঘা/ পরিবারকে মোট ২৩০ বিঘা/ পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও সেচ ও আগাছা দমন বাবদ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে এবং ০৫ পরিবারকে সেক্্র ফেরোমন ফাঁদ (পট ও লিউর) বিতরন করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণায়ের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ২৩২ টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানকার পাহাড়ীরা জুম চাষ করার পাশাপাশি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি
ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করছে।
এ এলাকার অধিকাংশ মাটি বেলে এটেল । মাটির পিএইচ-৫.০০-৫.৫
|
কৃষির চ্যালেঞ্জ |
১। ক্রমহ্রাসমান আবাদি ফসলী জমি ও ক্রমবর্ধিঞ্চু জনসংখ্যা।
২। সেচ সংকট ও বৈরী আবহাওয়া।
৩। মাটির উর্বরতা হ্রাস, জৈব সারের দুষ্প্রাপ্যতা।
৪। খরা সহিঞ্চু ফসলের জাতের অভাব।
৫। যান্ত্রিকরণে কৃষকের অর্থের অভাব।
৬। বালাইনাশকের অযৌক্তিক ব্যবহার, অসচেতন কৃষক।
৭। দূর্গম এলাকা ও দূর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
৮। দক্ষ জনবল ও যানবাহনের অভাব।
৯। ই-কৃষি প্রর্বতনে দক্ষ জনশক্তির অভাব।
১০। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া।
|
কৃষিতে সম্ভাবনা |
এখানকার পাহাড়ী জনগন অতীতকাল থেকেই পাহাড়ে জুম চাষ করে জীবন যাপন করে আসছে। অত্র উপজেলায় সমতল আবাদী জমির পরিমান কম। পাহাড় গুলোতে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমান খরিপ-১ মৌসুমে বিভিন্ন প্রকার ফল , শ্কা সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল বিশেষ করে আদা, হলুদ ও মুখী কচু উৎপাদন করে অত্র এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়া খরিপ-২ মৌসুমে আমনের স্বল্প মেয়াদী, উচ্চ ফলনশীল সর্বশেষ জাত চাষাবাদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। মোট আয়তনের প্রায় ৫০% পাহাড়ি জমি পতিত রয়েছে যেখানে স্থায়ী ফল বাগান, মসলা জাতীয় ফসল, সবজি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ সকল পতিত জমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রামগড় খাগড়াছড়ি নিরলসভাবে কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
|
সম্ভাবনাময় ফসল |
আম,কলা, আনারস, পেপে, মাল্টা, লেবু, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সব্জী
|
অর্জন / সাফল্য |
১। সম্প্রসারণ জোরদারকরণের মাধ্যমে চলতি বছরে দানা জাতীয় শষ্যের মোট উৎপাদন ১২০০০মে.টন।
২। প্রকল্প/কর্মসূচি সহায়তার মাধ্যমে ২০০ জন কৃষক/কৃষানীকে প্রশিক্ষণ প্রদান।
৩। কৃষক পর্যায়ে সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ৫৬০ মে.টন নন-ইউরিয়া সার ব্যবহার।
৫। খরা সহনশীল জাতের উফশী আউশ আবাদ সম্প্রসারণ (ব্রিধান ৪৮, নেরিকা মিউট্যান্ট)।
৬। ধানে পোকা দমনে ১০০% জমিতে পার্চিং করণ।
৭। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে ১০০০টি সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার।
৮। আমের মাছি পোকা দমনে ২,০০০টি সে∙ ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার ও ব্যাগিং পদ্ধতি সম্প্রসারণ।
৯। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ও মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান বৃদ্ধিকল্পে ১০ হেক্টর জমিতে ধৈঞ্চার আবাদ।
১০। খামার জাত সার, কম্পোষ্ট ও কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে ৫০টি প্রদর্শনী স্থাপন।
১১। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে পুরাতন ফলবাগানের পরিচর্যা(সার, সেচ ও বালাইনাশক) ও মালচিং বিষয়ে ১০০ জন চাষীকে উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যিমে প্রশিক্ষণ প্রদান।
১২। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প সহায়তায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ।
১৩। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সহায়তায় লেবু জাতীয় ফলের ৬০টি বসতবাড়ি প্রদর্শনী ও ২০টি ব্লক প্রদর্শনী স্থাপন।
১১। রাজস্ব খাতের আওতায় বিভিন্ন ফল ও প্রযুক্তির উপর টি প্রদর্শনী স্থাপন।
১২ এনএিিটপি-২ এর মাধ্যমে ৩০টি সিআইজি সমিতির প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ,প্রদর্শনী ও মাঠ দিবস করাসহ কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য সঞ্চয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
|